ভাষা নিয়ে যত মজার অভিজ্ঞতা।

এই লেখাটা মূলত বিভিন্ন ভাষা আর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের  ইংরেজীর একসেন্ট নিয়ে আমাদের মজার অভিজ্ঞতার গুলো।

একঃ ইষ্ট লন্ডন একসেন্ট ককনি 

পাঁচ বছর আগে পাড়ি জমিয়েছি ইংলেন্ডে। পড়ালেখান জন্য  আসা।যদিও দেশে আমার বি, বি, এ ছিল পুরাটাই ইংরেজীতে, তথাপি  IELTS পরিক্ষা দিয়ে ইংরেজদের প্রমান দিতে হয়েছে যে ইংরেজী লিখতে পরতে পারি। কিন্তু সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা খেলাম ইংলেন্ডের মাটিতে পা রাখার পর। বি, বি, সি শুনে শুনে আমার ইংরেজীর আনুশীলন, আষ্ট্রেলিয়ারা জানি অন্য একসেন্টে কথা বলে। কন্তু ইংলেন্ডে ইংরেজীর এই অবস্তা কেন? বি, বি, সি এর সেই প্রমিত উচ্চারনে কেউ কথা বলে না। লন্ডনে, বাঙ্গালীদের বসবা মূলত ইস্ট লন্ডনে। আমারা খালতো ভাই আমারা আগে লন্ডনে এসেছেন। তার সুবাধে আমারও ঠিকানা হলো ইষ্টে। এদিকে প্রচুর এশিয়ান। যে কটা ইংরেজ বিশেষ করে ইষ্টলন্ডনের স্থায়ী বসবাস করে তারা তাদের নিজেদের উচ্চারনে কথা বলে। যার নাম ককনি একসেন্ট (Cockney Accent )। অনেকটা মুখের ভেতরে করে বলা এই একসেন্ট নতুন আসা আমার বুঝতে বেশ আসুবিধা হয়। পরে জানলাম শুধু আমার না, অন্য অঞ্চলের ইংরেজদেরও নাকি বুঝতে অসুবিধা হয়। আর এ দিকে যে সব বঙ্গালী বংশভূত নতুন প্রজম্ম আছেন, বিশেষ করে যাদের এদেশে জম্ম, তাদের একসেন্ট মিশ্র (এ নিয়ে বিস্তারিত শেষে আলোচনা করবো) ইংরেজীর বাহিরে এরা ভলো সিলেটি বলে, আর সঠিক উচ্চারনে বাংলা বলার চেয়ে এরা হিন্দি বলতে বেশ সাছন্দবোধ করে !

ককনিতে লেটার (letter) উচ্চারন করে লেয়ার। আমারিকন এক কৌতুক অভিনেতা মজা করে বলেন, একটা শব্দথেকে দুটা অক্ষর চলে গেল ?  

মজার ককনি একসেন্টের একটা ভিডিও দিলাম। 


ককনি শিখতে চাইলে নিচের ভিডিওটা দেখুন। 





দুই লিভারপুল একসেন্ট ((VVaniilla) না Vanilla)

আমার বিশ্ব বিদ্যালয়ের মূল কেম্পাস লিভারপুলে। দেখতে দেখতে এম, বি, এ শেষ হয়ে গেল। কনভোকেশন লিভারপুলে। আমরা ঠিক করলাম দুইদিন আগে যাবো। লিভারপুলে কোন কোন জায়গায় যাওয়া যায় তা আগে থেকে ঠিক করে রাখলাম। লিভারপুলে নেমে হোটেলে যাবার জন্য টেক্সি নিলাম। পথে টেক্সি চালকে কাছে জানাতে চাইলাম এখালে সি বীচ্ যাবো কামেন। টেক্সি চালকে হ্যাঁ করে জানতে চাইলো কি? পরে বল্লাম  Sea Beach, Sea Side, ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলাফল শুন্য। যাহোক রিসেপসনে গিয়ে দেখে যে মায়েটা কথা বলতেছে তারা একসেন্ট সোজা বাংলায় নোয়াখালির বাংলা। চেক ইন শেষ করে তাকেও একই প্রশ্ন করলাম, বুঝেনা।। আমাদের ভাগ্য ভালো রিসেপন  মেনেজার ইংরেজ, কিন্তু লন্ডন থেকে এসেছেন। সে বল্ল, এরা লিভারপুল ছাড়া অন্য একসেন্ট খুব একটা বুঝেনা। পরে ম্যাকডোনান্ডে গিয়ে দেখি একই অবস্তা আমার বন্ধু Vanilla Ice Cream  চাইলে অনেক্ষন পর মেয়েটা বলে ওওও ভে......নিয়লা (VVaniillaa)। রেগে আমার বন্ধু আইফোনে উচ্চারন শুনিয়ে বলে, শুন এটা ভে......নিয়লা (VVaniilla) না Vanilla। 
মজার লিভারপুল একসেন্ট দেখুন। 

তিনঃ বাংলাদেশী অথচ হিন্দি পারোনা!!!!!!!!
এখানকার ইনিভর্সিটিগুলোতে প্রয় সব দেশে ছেলে মেয়ে আছে, আর ইন্ডিয়ানতো অবশ্যয়। আমাদের সেমিষ্টারে বাংলাদেশী ছিলাম আমরা মাত্র দুই জন আর প্রয় ৭/৮ জনের মত ইন্ডিয়ানি এবং পাকিস্তানি। আর একজন বাংলাদেশী ভাই তাদের সাথে অনরগল হিন্দিতে কথা বলে। আমি যদিও হিন্দি একটু একটু বুঝি, বলতে পারিনা। আর এদের ভাব খানা এমন আমি বাংলাদেশী অথচ হিন্দি পারিনা এটা একটা অপরাধ। দেখলেই বলে "কে ছা হু ইয়ার"...... আমি কোন উত্তর না দিয় না। একদিন এক মেয়ে এসে বলল আমি হিন্দি পারি না নাকি হিন্দি তে কথা বলতে চাই না। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। বললাম শুন তুই কি বাংলা জানস। না বোধক মাথা নাড়ল। আবার বল্লাম তুই কি জানস তোর দেশের একটা অঞ্চলের মানুষ বাংলায় কথা বলে। সে বলল হ্যাঁ, কলকাতায়। বললাম, তোর দেশের একটা ভাষা বাংলা অথচ তুই বাংলা জানোস না, আর হিন্দি আমার দেশের ভাষা না তার পরেও আমাকে হিন্দি জানতে হবে এ কেমন কথা। মনে মনে বল্লাম সব জায়গায় দাদা গিরি করিস না। 

পরে অবশ্যই বুঝতে পারলাম এর জন্য আমাদের দেশীরা অনেকাংশ দায়ী। ইন্ডিয়ানদের সাথে হিন্দিতে কথা বলতে পারলে আমাদের কিছু মানুষ নিজেকে বেশ স্মার্ট মনে করে। 

চারঃ হিন্দি উর্দু রহস্য। 
আমি আসলেই হিন্দি বা উর্দু কোনটাই জানি না। ছোটকালে হুজুরা যখন উর্দুতে মুনাজাত করত তখন আমিন না বলে চুপ করে বসে থাকতাম, কারন হুজুর কি বলতেছে আমি জানি না (আরবিতে করলে মানলাম পবিত্র কোরআনের কোন আয়াত পড়তেছে)। 
ইন্ডিয়ারা পাকিস্তানিদের সব কথা বুঝে আর পাকিস্তানিরাও ইন্ডিয়াদের কথা বুঝে। যখনি জিজ্ঞাস করি হিন্দি আর উর্দু কি এক, তারা বলে না। তাদের কথা আমি বেশ মনেযোগ দিয়ে শুনি, কিন্তু কোন পার্থক্য ধরতে পারি না। তার পরেও বলে হিন্দি আর উর্দু এক না। বিষটা আমার কাছে একনো রহাস্যময়। 


পাঁচঃ ইতালিয়ানদের সাথে কথাবলতে যত সমস্য।

ইতালিয়ানরা সব সময় তাদের ভাষায় কথা বলে আর ভবখানা এমন যেন সবাই তাদের কথা বুঝে। আর ইতালিয়ান মেয়েরা হাত না নেড়ে কথা বলতে পারে না। এ নিয়ে একটা মজার প্রবাদ আছে "ইতালিয়ান মেয়েদের মুখ বন্ধ করতে চাইলে তাদের হাত দুটা বন্ধ করে রাখ এতে চলবে।"  আমি আমার ইতালিয়ান কলিগের কাছ থেকে বেশ কিছু ইতালিয়ান শব্দ শিখে নিয়েছি। একদিন আমি রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তার সাথে ফোনে কথা বলতেছি আর মজা করে সেই শব্দগুলো ব্যাবহার করতেছি। আমার কথাশুনে আমার পাশের লোকটি মনে করলো আমি ইতালিয়ান জানি। সে এসে হাও মাও করে আমার সাথে ইতালিয়ান ভাষায় কথা বলা শুরু করলো। আমি যতই বলি, আমি ইতালিয়ান বুঝি না সে বিশ্বাস করে না। তার কাথা এমি ফোনে কথা বলতে সে শুনেছে। । কি মুসকিল বলেন তো।



No comments: