বাংলাদেশে কখনো সংখালঘু দাঙ্গা হবে না.

না আমি কোন অলিক স্বপ্ন দেখতেছিনা,  কিম্বা কোন রাজনৈতিক নেতার মতো হিপোক্রেসি করতেছিনা। একেবারে সত্য কথাটি বলতেছি। আমার কথা বিশ্বাস না হলে আপনারাই বলুন দাঙ্গা কেমনে হবে? দাঙ্গা হতে হলে দুই পক্ষ সমান হতে হবে। বাংলাদেশের সংখালুগু আমরা যাদের বলি তাঁরা আসলে সংখায় আনেক কম। ধর্মের দিকে এদেশে শতকরা নব্বই ভাগ মুসলিম আর বাকি দশ ভাগ অন্যান্য ধর্মের অধিকারী। তার উপর খুব কম এলাকা আছে এরা সংখায় বশী। এই দৃষ্টিকোন থেকে যদি দেখেন তাহলে এদেশে সংখালঘুদের দাংগা করার সমর্থন নেই এবং কখনো সামর্থন অর্জন করতে পারবে বলে মনে হয় না। আর করাও বা দরকার কি? বছরের পর বছর বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অপরের পাশে থাকেছেন। ধর্মের দোহায় গুলো ,যেমন মুসলমানের ছোয়া লাগলে গা নাপাক হয়ে যাবে, আস্তে আস্তে উঠে যাচ্ছে।  শিক্ষা, সত্যকারের ধর্মীয় মূল্যবোধের বিকাশে আস্তের আস্তে মানুষকে আরো কাছে নিয়ে আসতেছে। শহর থেকে হিন্দু হোটেলের সাইন বোর্ড উঠেগেছে অনেক আগে। হিন্দু মুসলমানের সন্তান একসাথে পড়ালেখা করতেছে, খেলতেছে। মোট কথা ধর্মের কারনে বিবেধ ধীরে ধীরে মলীন হয়ে যেতেছে। 


প্রশ্ন করেতে পারেন তাহলে বাংলাদেশে কি সংখালগুরা বেশ শন্তিতে আছেন? দুঃখজনক হলএও সত্য তাঁরা শান্তিতে আছেন তা কেউ দাবি করতে পারিনা। দেশ স্বাধীন হলেও অনেক ক্ষেত্রে তাদের অবস্তা একটুও পারিবর্তন হয় নিয়। না আমি উল্টা পাল্টা বলতেছিনা। উপরে আমি যে পরিবর্তনের কথা বলেছি তা মা্নুষ হিসবে একে অপারের কছে আসা, তথাকতিত ধর্মের বাঁধা নিষেধ দূর হওয়া। কন্তু দেশে সাধারন জনগন ছাড়া আরো একটি শ্রেণী আছেন। তাঁরা হলেন আমাদের অসাধারন রাজনীতীবিদ। সংখালগু সম্প্রদায়ের প্রতি তাদের মনোভাবে এটুকুও পরিবর্তন হয় নায়। 

আমরা সবাই জানি স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংখালগুরা ছিলেন অন্যতম ইসু। ধর্ম ভিত্তিক পাকিস্থানে তাদের কোন জায়গা ছিলোনা। যুদ্ধের সমায় এর ছিল সবচেয়ে সহজ টার্গেট। ধর্মের নামে, ভারতের দালাল নাম দিয়ে এদের কে হত্যা করা বা দেশ ত্যাগ করতে জোর করা ছিল সবচেয়ে লাভজনক। কারন একবার দেশ ছেড়ে চলে গেলে এদের সব সম্পদের মালিক বনে যাওয়া যেত। দেশ স্বাধীন হলো, আর সবার মতো এরাও আশায় বুক বাধল বাংলাদেশ হবে সবার। এই দেশে ধর্ম প্রিয় মানুষের এদেশ সবার। কিন্তু বাস্তবতা কি এটাই?

৭১ এর পরাজয় জামায়েত কোন দিন ভুলতে পারেনাই, ধর্ম তাদের রাজনীতির মূল পজিশনিং পয়েন্ট, তাই তারা জানে অন্যধর্মের লোক তাদের কে কোনদিন ভোট দেবা না। সুতারাং সংখালগুরা জামায়েতের কাছে কখনো গুরুত্বপূর্ণ ছিল না স্বাধীন বাংলাদেশে। তারদের একমাত্র ইচ্ছা এরা যেন ভোটের সমাই ভোট কেন্দ্রে না যায়। জামায়েত সংখালগুদের  পছন্দ করেনা, তারপরেও এর ভোটের সমায় ছাড়া এদের কে ঘাটতে যায় না। ও হ্যাঁ, ২০০১ এর ভোটে বি, পি, এর সাথে জোট বাঁধে জিতার পর সংখালগুদের একটা শিক্ষাদিতে তারা ভুল করেনাই! যা ২০০১ সালের নির্বাচনের পরের ঘটনাগুলো তে দেখা গেল। 

কিন্তু অন্যদুই দল, বি, এন, পি এবং আওয়ামীলীগ খেলতে থাকলো এদের সাথে।ঐতিহাসিক ভাবে সংখালগুদের প্রিয় দল আওয়ামীলীগ, বিভিন্ন বিপদ আপদে দলটাকে এরা শেষ আশ্রয় মনে করেছেন। আওয়ামীলীগ ও সব মানুষের জন্য তাদের দরজা খোলা রেখেছিলেন। বি, এন, পি এদের কে দল ভেড়ানোর চেষ্টা করে অনেক খানি সফল হয়েছেন। যার ফলে দেখা যায়, বি, এন, পির শীর্ষ নেতৃত্বে অনেকে আছেন হিন্দু সম্প্রদেয়ের লোক। কিন্তু আওয়ামীলীগ এদের কে নিজেদের সম্মপদ মনে করে। তারা ধরে নে, এদের সব ভোট তাদের। অন্যকে ভোট দেওয়া মানে অপরাধ করা। 

সব মিলিয়ে সংখালগুরা আজ খেলনার পাত্র। এদের নিজেদের কোন পছন্দ থাকাটাই অপরাধ। ভোট কেন্দ্রে গেলে দোষ, না গেলেও দোষ। এদের সম্পদে সবার অধীকার ! কিন্তু এমনতো হবার কথা ছিল না। বাংলাদেশ তো ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হয়নি। তাহলে ধর্ম আলাদা বালে এদেরকে কেন জাতীয় ভাবে আলাদা করে দেখবো। সংখালগু তত্বের কোন স্থান থাকার কথাতো না। এই শব্দোতো সরকারী ভাবে কোথায় লেখা থাকা, ব্যাবহার করা ৭১ এর সরাসরি বিরোধীতা। 

মানলাম বাংলাদেশে ৯০% এর বেশী মুসলমান। কিন্তু আমরা কেমন মুসলমন যে ধর্মের কোন উপকার তো করতে পারিনা বরং ধর্মের নামে অন্যায় করে ধর্মের আপমান করি। অন্যধর্মের কাছে নিজের ধর্মকে ছোট করে। অথচ, আমরা সেই মহামানবের অনুসারী যার কাছে সব ধর্মে, বর্ণের, গোত্রের মানুষ ন্যায় বিচারের জান্য  আসতেন। নিজের সম্পদ জমা রাখতে আসতেন। তিনি ন্যায় বিচার করতেন, উপকার করতেন, কিন্তু বিনিময়ে কোনদিন বালেন নাই আমি তোমার উপকার করলাম, তুমি আমার ধর্ম গ্রহন করো। কারন, ইসলাম জোড় করে বা বিনিময়ে গ্রহন করানোর কোন ধর্ম না। ইসলাম কে প্রচার করতে হলে তা সবার কাছে সঠিক ভাবে উপস্থাপন করাটায় যথেষ্ট। আর আল্লাহ যার অন্তর খুলেদেন, রহম করেন, সেই এটা গ্রহন করবে। আর আল্লহ যার অন্তরে সিল গালা করে দিয়েছেন তাকে কাছে টানার জন্য নবীজীকে চেষ্টা করতে নিষেধ করেছেন, আপনি আমি তো দুরের কথা। সুতরাং মানে অন্য ধর্মের লোকের প্রতি ঘৃনা পোষন করে আপনি যদি মানে কারেন ইসলামের সেবা করতেছেন, তাহলে আমি বলবো আমনি নিজ ধর্ম সর্ম্পকে একটু ভালো করে জানেন। নিজে পড়েন, ভালো কোন আলেমের কাছে জান, (আমাদের দেশে ক্ষমতায় যাবার জন্য মুখিয়ে থাকা তথাকতিত রাজনৈতিক আলেম না)। 

সংখালগুদের সার্ম্পকে ইসলামের দৃষ্টিভংগি জানার জন্য, পৃথিবীর প্রথম লিখিত সংবিধান মদিনা সনাদই যথেষ্ট। বিশেষ করে ৮, ৯, ও ১৩ নং ধারা দেখুন। আর ভাবুন, যে সনদ করেছিলেন নবীজী সয়ং নিজে, এ সনদে অন্য সম্প্রদেয়ে লোকদের প্রতি নবীজী কি ধারনা পোষন করেছিলেন। আর আপনার ধারনা কি। তারপর আপনি নিজে ভাবেন, মুসলমান হিসবে আপনি কতটুকু সঠিক পথে আছেন। আল্লাহ আমাদের হেদায় করুক। 


মদীনা সনদের মূল বিষয়বস্তু ছিল:

১) সনদপত্রে স্বাক্ষরকারী সম্প্রদায়সমূহ একটি জাতি গঠন করবে।

২. যুদ্ধ বা হানাহানি শুরু হবার মতো তীব্র বিরোধ তৈরি হলে বিষয়টি আল্লাহ এবং হযরত মুহাম্মদ (স)-এর কাছে ন্যস্ত হবে।

৩) কোন সম্প্রদায় গোপনে কুরাইশদের সাথে কোন প্রকার সন্ধি করতে পারবে না কিংবা মদীনা বা মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে কুরাইশদের কোনরুপ সাহায্য-সহযোগীতা করতে পারবে না।

৪) মুসলিম, খ্রীস্টান, ইহুদী, পৌত্তলিক ও অন্যান্য সম্প্রদায় ধর্মীয় ব্যাপারে পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করবে। কেউ কারো ধর্মীয় কাজে কোন রকম হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।

৫) মদিনার উপর যে কোন বহিরাক্রমণ কে রাষ্ট্রের জন্য বিপদ বলে গণ্য করতে হবে। এবং সেই আক্রমণ কে প্রতিরোধ করার জন্য সকল সম্প্রদায়কে এক জোট হয়ে অগ্রসর হতে হবে।

৬) রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষার ব্যবস্থা থাকবে।

৭) অসহায় ও দূর্বলকে সর্বাবস্থায় সাহায্য ও রক্ষা করতে হবে।

৮) সকল প্রকার রক্তক্ষয়, হত্যা ও বলাৎকার নিষিদ্ধ করতে হবে এবং মদীনাকে পবিত্র নগরী বলে ঘোষণা করা হবে।

৯) কোন লোক ব্যক্তিগত অপরাধ করলে তা ব্যক্তিগত অপরাধ হিসেবেই বিচার করা হবে। তজ্জন্য অপরাধীর সম্প্রদায় কে দায়ী করা যাবে না।

১০) মুসলমান, ইহুদী ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পরষ্পর বন্ধুসুলভ আচরণ করবে।

১১) রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তির অধিকার থাকবে রাষ্ট্রপ্রধানের এবং তিনি হবেন সর্বোচ্চ বিচারালয়ের সর্বোচ্চ বিচারক।

১২) মুহাম্মদ (সাঃ) এর অনুমতি ব্যতীত মদীনাবাসীগণ কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে না।


১৩) মুসলমানদের কেউ যদি অন্যায় কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করে তবে সবাই মিলে তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। নিজ সন্তান বা আত্নীয় হলেও এ ব্যাপারে তাকে ক্ষমা করা যাবে না।

No comments: